ট্রান্সফরমার

http://www.amaderelectronics.com/basic-electronics

প্রশ্নঃ কি?

উত্তরঃ সহজ কথায় বলা যায়, এমন একটি ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র যেটি ইনপুট হিসেবে ইলেক্ট্রিক পাওয়ার নিয়ে আউটপুটেও ইলেকট্রিক পাওয়ার দিবে, কিন্তু এদের মধ্যে কোন তারের সংযোগ থাকবে না।
কিন্তু, তাত্ত্বিক ভাবে বলতে গেলে বলতে হবে, ” এমন একটি স্থির যন্ত্র বিশেষ যেখানে কারেন্টের সাপেক্ষে, সাপ্লাই এর ভোল্টেজ হয় বাড়ানো হয় নয়ত কমানো হয়”
ইংরেজি শব্দ ট্রান্সফরম (Transfom) থেকে ট্রান্সফরমার (transformer) নামটি উদ্ভুত। যার বাংলা অর্থ কোন কিছুকে ট্রান্সফরম বা রূপান্তর করা। আমাদের দৈনন্দিন দেখা ট্রান্সফরমার সমূহ ভোল্টেজ ও কারেন্ট কে ট্রান্সফরম করে ব্যবহার উপযোগী করে বিধায় এটির নাম এমন দেয়া হয়েছে।

প্রশ্নঃ ট্রান্সফরমার কিভাবে কাজ করে?

ট্রান্সফরমার মূলত মিউচুয়াল ইন্ডাকশনের মাধ্যমে কাজ করে। প্রাইমারী থেকে সেকেন্ডারী তে পাওয়ার ট্রান্সফার করে এই পদ্ধতি তে। এ সম্পর্কে ৮ নাম্বার পয়েন্টে লেখা হয়েছে।

প্রশ্নঃ ট্রান্সফরমার কেন ব্যবহার করা হয়?

উত্তরঃ
  • ধরুন পাওয়ার স্টেশন থেকে আপনার বাসা অনেক দূরে। তখন আপনি যদি আপনার প্রয়োজনীয় ভোল্টেজ পেতে চান তাহলে সেখানে একটি স্টেপআপ ট্রান্সফরমার দিয়ে বাড়িয়ে তা দূরবর্তী স্থানে যেখানে আপনার বাসা অবস্থিত, সেখানে সঞ্চালিত করা হয়।
  • আবার, আপনার বাসায় লাইন দিয়ে সরাসরি শখের প্রজেক্ট কিংবা কিংবা জরুরী ব্যবহার্য্য টিভি, ডিভিডি, টর্চ, চার্জ লাইট ইত্যাদি কে কখনই চালাতে পারবেন না। প্রথমে আপনাকে অবশ্যই মেইন লাইনের ভোল্টেজ কে কমিয়ে উক্ত বা যন্ত্রের উপযুক্ত করতে হবে। আর এই কাজটিই করে থাকে ট্রান্সফরমার।
নিচের চিত্রটিতে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থার তুলনা মূলক উদাহরণ দেখানো হয়েছে-

গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা
গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা

প্রশ্নঃ কেন দূরবর্তী স্থানে সঞ্চালনের জন্য হাই ভোল্টেজ  ট্রান্সফরমার ব্যবহার করা হয়?

আমরা জানি যে পাওয়ার এর সূত্রানুযায়ী,
P = V × I
এখানে,
  • P = পাওয়ার,
  • V = ভোল্টেজ,
  • I = কারেন্ট
  • অর্থাৎ, ভোল্টেজ কারেন্টের সমন্বয়েই মোট পাওয়ার। অতএব, কারেন্টের পরিমাণ কমিয়ে ভোল্টেজ বৃদ্ধি করলেও মোট পাওয়ার প্রায়ই সমান থাকবে।
  • আবার, কারেন্ট প্রবাহমাত্রা নির্ভর করে ক্যাবলের পুরুত্ব বা ক্যাবল কতোটা মোটা তার উপরে। অর্থাৎ ক্যাবল মোটা হলে বেশি কারেন্ট প্রবাহিত হতে পারবে আবার চিকন হলে কম কারেন্ট প্রবাহিত হবে।  অন্যদিকে ক্যাবলের কম পুরু হলে খরচ কম হবে। ট্রান্সমিশন লাইনে ভোল্টেজ বাড়িয়ে, কম কারেন্ট ব্যবহার করলে ট্রান্সমিশন ক্যাবলের খরচ কম পড়বে।
  • এছাড়াও কারেন্ট প্রবাহ কম হলে ট্রান্সমিশন লাইন কম উত্তপ্ত হবে তাই কপার লস কম হবে, ফলে লাইনের আড়াআড়ি ভোল্টেজ ড্রপ কম হবে।
ইত্যাদি বিষয়সমূহ বিবেচনা করে ট্রান্সমিশন লাইনে মোট পাওয়ার কে ঠিক রেখে কারেন্ট কমিয়ে দিয়ে ভোল্টেজ বৃদ্ধি করে সঞ্চালন করা হয়।

প্রশ্নঃ ট্রান্সফরমারের সিম্বল বা চিহ্ন কি?

ইলেকট্রিক্যাল বা ইলেকট্রনিক এ আমরা সচারচর এই চিহ্ন বা সিম্বল ব্যবহার করেই ট্রান্সফরমারকে চিহ্নিত করে থাকি-

বিভিন্ন রকম ট্রান্সফরমারের সিম্বল ও আঁকবার সঠিক পদ্ধতি
বিভিন্ন রকম ট্রান্সফরমারের সিম্বল ও আঁকবার সঠিক পদ্ধতি

প্রশ্নঃ ট্রান্সফরমার মূলত কি কি জিনিস নিয়ে তৈরি হয়?

উত্তরঃ ট্রান্সফরমার মূলত নিম্নোক্ত জিনিস গুলো দ্বারা তৈরি হয়।
  • ১। প্রাইমারী কয়েল
  • ২। সেকেন্ডারী কয়েল ও
  • ৩। ম্যাগনেটিক কোর
এছাড়াও প্রকারভেদ ও প্রয়োজন অনুসারে আরো বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ব্যবহার হয়ে থাকে।

প্রশ্নঃ বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারের বিভিন্ন পার্টস দেখতে কেমন?

নিচে হাই ভোল্টেজ থ্রী ফেজ ট্রান্সফরমারের কিছু বাহ্যিক পার্টস দেখানো হলো-

থ্রী ফেজ ট্রান্সফরমার এর বিভিন্ন বাহ্যিক যন্ত্রাংশ
থ্রী ফেজ ট্রান্সফরমার এর বিভিন্ন বাহ্যিক যন্ত্রাংশ

প্রশ্নঃ সংযোগ ছাড়া এক কয়েল থেকে অপর কয়েলে কিভাবে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়?

উত্তরঃ এটাকে বলা হয় মিউচুয়াল ইন্ডাকশন। অর্থাৎ প্রাইমারী কয়েলে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করলে এর চার পাশে একটি ম্যাগনেটিক ফিল্ড বা তড়িৎ চুম্বকীয় আবেশের সৃষ্টি হয়। আর এই ফিল্ড থেকে ফ্লাক্স সংগ্রহ করে সেকেন্ডারী কয়েল। তখন তাদের মধ্যে একটি মিউচুয়াল/কমন ইন্ডাকশন এর তৈরি হয়। যার ফলে সেকেন্ডারীতে তড়িৎ প্রবাহিত হয়। এই প্রবাহিত তড়িৎ এর মান নির্ভর করে সেকেন্ডারী ও প্রাইমারী তে ব্যবহৃত প্যাঁচ সংখ্যার উপরে। যাকে বলে ট্রান্সফরমারমেশন রেশিও

মিউচুয়াল ইন্ডাকশন
মিউচুয়াল ইন্ডাকশন

প্রশ্নঃ ট্রান্সফরমার কোন সূত্রের উপর ভিত্তি করে চলে?

উত্তরঃ এটি ফ্যারাডের সূত্রের উপর ভিত্তি করে চলে। এখন প্রশ্ন জাগতে পারে ফ্যারাডে সাহেব তো বলেছিলেন যে-
একটি ম্যাগনেটিক ফিল্ডকে আরেকটি কয়েল দ্বারা আবিষ্ট করতে হলে অবশ্যই তাদের যে কোন একটি কে নড়াচরা করতে হবে। তাছারা ফ্লাক্স আবিষ্ট হবে না।
হ্যা, তবে সেটা ছিল ডিসি এর ক্ষেত্রে। আর ট্রান্সফরমার বা পালসেটেড ডিসি তে চলে। তাই এটাকে আর আলাদা করে নাড়াতে হয় না। কারন এর তরঙ্গ আপনা আপনি ই অনুড়িত হতে থাকে।

প্রশ্নঃ একটি ট্রান্সফরমার এর এফিশিয়েন্সি শতকরা কত?

উত্তরঃ পৃথিবীতে কোন মেশিনই আজ পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয় নি যার এফিশিয়েন্সি বা আউটপুট ১০০ ভাগ। একমাত্র ট্রান্সফরমারই এমন একটি যন্ত্র যার আউটপুট পাওয়ার প্রায় ইনপুটের ৯০% থেকে ৯৯%। মানে এখানে পাওয়ার লস খুবই কম বা এক্কেবারেই নগন্য।
এফিশিয়েন্সি মানে হচ্ছে কোন যন্ত্রের ইনপুট ও আউটপুটে প্রদত্ত শক্তির তুলনা যার মাধ্যমে যন্ত্রটির দক্ষতা পরিমাপ করা যায়।

প্রশ্নঃ ট্রান্সফরমার এর ক্ষমতার একক কি এবং কেন?

উত্তরঃ ট্রান্সফরমারের ক্ষমতার একক কেভিএ (KVA)। অর্থাৎ কিলোওয়াট ভোল্ট এম্পিয়ার। কারণ টা হল, আমরা জানি যেকোন মেশিনের ক্ষমতার একক নির্ধারণ করা হয় তার #লস এর উপর ভিত্তি করে। এখানেও ঠিক একই বিষয়। ট্রান্সফরমারের লস গুলো হল
  • ১। আয়রন লস/কোর লস
  • ২। কপার লস
আচ্ছা, তো এখন আয়রন লস মানেই ভোল্টেজ এর ব্যাপার, আর কপার লস মানেই কারেন্ট এর লস। তাহলে মোটের উপর দাঁড়াল ভোল্ট এম্পিয়ার। এ জন্যেই ট্রান্সফরমার এর ক্ষমতার একক হিসেবে কিলোওয়াট ভোল্ট এম্পিয়ার বা কেভিএ লেখা হয়ে থাকে।

প্রশ্নঃ আইডিয়াল ট্রান্সফরমার কি?

উত্তরঃ আসলে যেকোন মেশিন বা বস্তুর ই আইডিয়াল ফর্ম বা তার আদর্শ একটি অবস্থাকে বুঝায় যেখানে তার লসের পরিমাণ ০%। মূলত ল্যাবরেটরিতে গবেষণার সময় এই আদর্শ মান কে ব্যবহার করা হয়। মানে ইনপুটে দেয়া পাওয়ারের ১০০%-ই আউটপুট পাওয়া যাবে। কিন্তু বাস্তবিক পর্যায়ে তা হয় না। কারণ যখন ওই যন্ত্রকে যখন বাস্তবে রূপ দেওয়া হয় তখন অনেক গুলো লস এসে সামনে পথ আটকায়।

প্রশ্নঃ ট্রান্সফরমার এর কোরের মধ্যে ইনসুলেশন বা পাতলা আবরণ কেন ব্যবহার করা হয়?

উত্তরঃ ছোট ট্রান্সফরমারের কোরের মধ্যে আসলে অনেক গুলো (E) এবং (I) এবং বড় সাইজের ট্রান্সফরমারের আলাদা আকৃতির স্টিলের পাত দেখা যায়। আসলে এই প্রতিটি পাতের গায়ে এক প্রকার ভারনিশ/লেমিনেশন পেইন্ট ব্যবহার করা হয়। কারন এতে ইলেকট্রিক শর্ট হওয়ার ভয় থাকে না।
কিন্তু ইন্সুলেশন দেওয়ার প্রধান কারণ হল যাতে একেকটি কোর আলাদা ভাবে থাকতে পারে। তারা যেন একে অন্যের গায়ে লেগে না যায়। এতে তাদের আলাদা আলাদা কোরের রেজিস্টেন্স অনেক কম থাকে বিধায় ভোল্টেজ ড্রপ কম হয়।
যদি কোন ইনসুলেশন ব্যবহার না করা হত তাহলে সবগুলো কোর মিলে একটি বড় সাইজের কোরে পরিণত হতো এবং এর আয়তন বেড়ে যেত। ফলে এর রেজিস্টেন্স ও অনেক বেশি হয়ে যেত। ফলে অনেক ভোল্টেজ ও ড্রপ হত। তাই এই লস ঠেকাতেই ট্রান্সফরমারে ইনসুলেশন ব্যবহার করা হয়।

প্রশ্নঃ এডি কারেন্ট লস কি?

উত্তরঃ ট্রান্সফরমারের আয়রন লস টা নির্ভর করে ম্যাক্সিমাম ফ্লাক্স ঘনত্ব আর সাপ্লাই ফ্রিকোয়েন্সি এর উপর। যেহেতু ট্রান্সফরমার সব সময় নির্দিষ্ট অর্থাৎ ফিক্সড ফ্রিকোয়েন্সি আর সাপ্লাই ও ফিক্সড তাহলে এখানে কোর ও আয়রন লস প্র্যাক্টিক্যাল যেকোন লোডের জন্যই সমান হয়। অর্থাৎ এখানে আয়রন/কোর লস কন্সট্যান্ট বা অপরিবর্তিত লস হিসেবে গণ্য হয়। আর এটিই মুলত এডি কারেন্ট লস নামে পরিচিত।

প্রশ্নঃ এডি কারেন্ট লস কিভাবে কমানো যায়?

উত্তরঃ এডি কারেন্ট লস কমাতে চাইলে অবশ্যই কোরের লেমিনেশন গুলো কে যথা সম্ভব পাতলা/চিকন করতে হবে। এবং লেমিনেশন গুলোকে ভালভাবে লেমিনেটিং বা ইনসুলেটিং করা যায় তাহলে এডি কারেন্ট লস অনেকাংশে কমানো সম্ভব।

প্রশ্নঃ হিসটেরেসিস লস কিঃ

আমরা জানি ট্রান্সফরমার তৈরি হচ্ছে তড়িৎ চৌম্বকীয় বস্তু যেমন লোহা, ফেরাইট কোর প্রভৃতি দ্বারা। এখন এই ট্রান্সফরমার যখন কোন অল্টারনেটিং কারেন্টের দ্বারা বারবার ম্যাগনেটাইজ ডি-ম্যাগনেটাইজ করা হয় তখন এর অভ্যন্তরে থাকা অণুগুলোও বারংবার দিক পরিবর্তন করতে থাকে। অণুগুলোর এই দিক পরিবর্তনের ফলে কিছু শক্তি তাপ হিসাবে নির্গত হয় যা কোন কাজে লাগে না। একেই হিসটেরেসিস লস বলে।
এখানে উল্লেখ্য যে এই হিসটেরেসিস লস শুধু যে ট্রান্সফরমারেই হয় তা কিন্তু নয়। মোটর, জেনারেটর, ফ্যান থেকে শুরু করে যেখানেই কোন কয়েল কে চৌম্বকীয় বস্তুর উপর প্যাঁচানো হয় সেখানেই হিস্টেরেসিস লস দেখা যায়। তবে জেনারেটর আর ট্রান্সফরমার এ এই হিস্টেরেসিস লস টি বেশি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়

প্রশ্নঃ স্টেপ আপ ট্রান্সফরমার কাকে বলে?

যে ট্রান্সফরমারের প্রাইমারীতে ভোল্টেজ দিলে সেকেন্ডারীতে উচ্চ ভোল্টেজ পাওয়া যায় তাকে স্টেপ আপ ট্রান্সফরমার বলে। আমরা ইউপিএস, , ইনভার্টার প্রভৃতি যন্ত্রপাতিতে যে ট্রান্সফরমার ব্যবহার করে থাকি সেগুলো স্টেপআপ প্রকৃতির ট্রান্সফরমার।

প্রশ্নঃ স্টেপ ডাউন ট্রান্সফরমার কাকে বলে?

যে ট্রান্সফরমার এর প্রাইমারীতে ভোল্টেজ দিলে সেকেন্ডারীতে অপেক্ষাকৃত নিম্ন ভোল্টেজ পাওয়া যায় তাকে স্টেপ ডাউন ট্রান্সফরমার বলে। বেশীরভাগ ঘরের যন্ত্রপাতি যা আমরা ব্যবহার করি সেগুলোর ভেতরে স্টেপ ডাউন ট্রান্সফরমারই ব্যবহার করা হয়।

প্রশ্নঃ কিভাবে একটি স্টেপ আপ ট্রান্সফরমার কে স্টেপ ডাউন করবো?

উত্তরঃ যদি আমরা কোন ট্রান্সফরমার কে স্টেপআপ করতে চাই তাহলে ট্রান্সফরমারের প্রাইমারী কয়েলের প্যাঁচ সংখ্যার তুলণায় সেকেন্ডারী কয়েলের প্যাঁচ বেশি করতে হবে। আর এই প্যাঁচ সংখ্যা নির্ণয় করতে হলে আমাদের কে ট্রান্সফরমারের প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল জানতে হবে এবং সূত্রানুযায়ী ট্রান্সফরমারের প্রাইমারী ও সেকেন্ডারী কে প্রয়োজন মত প্যাঁচ দিয়ে নিতে হবে। আমাদের ইলেকট্রনিক্স সাইটে এ বিষয়ে পূর্বেই লেখা হয়েছে বিধায় আমি আর তা পুনরাবৃত্তি করলাম না। লেখাটি পড়ুন এই লিংক থেকে

প্রশ্নঃ ট্রান্সফরমার রেশিও বলতে কি বুঝায়?

ট্রান্সফরমারের প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি কয়েলের ভোল্টেজ, প্যাঁচ সংখ্যা ও কারেন্টের মধ্যে যে সম্পর্ক থাকে, তাকে ট্রান্সফরমারের ট্রান্সফরমেশন রেশিও বলে। একে নিম্নোক্ত ভাবে প্রকাশ করা যায়-
Vp⁄Vs = Np⁄Ns = Is⁄Ip
এখানে,
  • Vp = প্রাইমারী ভোল্টেজ
  • Vs = সেকেন্ডারী ভোল্টেজ
  • Np = প্রাইমারী প্যাঁচ সংখ্যা
  • Ns = সেকেন্ডারী প্যাঁচ সংখ্যা
  • Ip = প্রাইমারী কারেন্ট
  • Is = সেকেন্ডারী কারেন্ট
নিচের চিত্রটি লক্ষ্য করলে বুঝতে সুবিধা হবে আশাকরি-

ট্রান্সফরমেশন রেশিও
ট্রান্সফরমেশন রেশিও

প্রশ্নঃ কোন ট্রান্সফরমার এর এফিসিয়েন্সি কখন ম্যাক্সিমাম হয়?

উত্তরঃ যখন আয়রণ লস ও কপার লস প্রায় সমান হয় তখনই ওই ট্রান্সফরমারের ইফিসিয়েন্সি ম্যাক্সিমাম হতে পারবে।

প্রশ্নঃ ট্রান্সফরমার ঠান্ডা রাখার সবচেয়ে জনপ্রিয় বা ব্যবহৃত উপায় কি?

উত্তরঃ অয়েল কুলিং বা তেল দিয়ে  করা হয়। এ ছাড়াও হাল আমলে এয়ার কুলিং, নাইট্রোজেন কুলিং, ওয়াটার কুলিং প্রভৃতিও ব্যবহার করা হয়।

প্রশ্নঃ লিকেজ ফ্লাক্স কি?

উত্তরঃ আমরা জানি ট্রান্সফরমার মিউচুয়াল বা কমন ইন্ডাকটেন্স এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করে। এখন, লিকেজ ফ্লাক্স বলতে বুঝায় প্রাইমারী ও সেকেন্ডারী কয়েলের যে ফ্লাক্স উৎপন্ন হয়। আর আরেকটি কথা হল যদি সেকেন্ডারি কয়েলের ফ্লাক্সের পরিমাণ প্রাইমারী এর চেয়ে বেশি হয় তাহলে আউটপুটেও স্বাভাবিকের চেয়ে কম ভোল্টেজ উতপন্ন হবে।

প্রশ্নঃ ট্রান্সফরমার কোর কি দিয়ে তৈরি হয়?

উত্তরঃ আসলে ট্রান্সফরমারের কোর গুলো নরমাল স্টেনলনেস স্টিল দিয়ে হয় না। এটার জন্য #সিলিকন #স্টিল নামক একধরনের স্টিল এর পাত ব্যহার করা হয় যা বাজারে পাওয়া যায়। তবে আসল নকল এর ও একটা বিষয় কিন্তু সব জায়গাতেই আছে।

বিভিন্ন রকম ও আকৃতির ল্যামিনেশন কোর
বিভিন্ন রকম ও আকৃতির ল্যামিনেশন কোর

প্রশ্নঃ ট্রান্সফরমারের কোরের লেমিনেশন/ইনসুলেশন কতটুকু পুরু হয়ে থাকে?

উত্তরঃ আসলে এই লেমিনেশন স্বাভাবিক ভাবে ০.৪মিমি থেকে ০.৫ মিমি পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে পাওয়ার লাইনে ব্যবহৃত অনেক ট্রান্সফরমারের লেমিনেশনের পুরুত্ব অনেক কম হয় (০.২ মিমি)।

প্রশ্নঃ একটি ট্রান্সফরমার কয়েল এর তার গুলো কি মানের হতে হবে?

উত্তরঃ একটি ট্রান্সফরমারের প্রাইমারী এমং সেকেন্ডারী কয়েল অনেক ভাল মানের অরিজিনাল কপার তার দিতে তৈরি করতে হবে।তাছাড়া এটার মধ্যে দিয়ে অতিরিক্ত রেজিস্ট্যান্স তৈরি হয়,ফলে ভোল্টেজ ড্রপ বেশি হয়,লসের পরিমাণ বেড়ে যায়।

প্রশ্নঃ অন লোড আর নো লোড কি?

উত্তরঃ ট্রান্সফরমারের আউটপুটে যখন কোন লোড লাগানো থাকে না তখন তাকে বলে “নো লোড কন্ডিশন”। আর যদি আউটপুটে লোড বিদ্যমান থাকে তাহলে তাকে বলা হয় “লোডেড কন্ডিশন”।

প্রশ্নঃ টরোয়েড বা টরয়েড ট্রান্সফরমার কি? 

উত্তরঃ এখন আমরা আলোচনা করবো নতুন দের বিশেস সেনসেশন টরোয়েড ট্রান্সফরমার নিয়ে। এই টরোয়েড বা টরয়েড ট্রান্সফরমার (Toroid transformer) মূলত একই নীতিতে কাজ করে থাকে। এর প্রকৃত নাম টরোয়ডাল বা টরওয়ডাল ট্রান্সফরমার। এর গোল বা রিং আকৃতির জন্য এই নাম দেয়া হয়েছে। ইংরেজি টরাস (Torus) শব্দের অর্থ গোলাকার রিং বিশেষ। আর এই টরাস শব্দটি থকেই টরোয়েড শব্দটি এসেছে।
নিচে আমরা কিছু টরোয়েড পাওয়ার ট্রান্সফরমার দেখতে পাচ্ছি-

বিভিন্ন আকৃতির টরোয়েড পাওয়ার ট্রান্সফরমার
বিভিন্ন আকৃতির টরোয়েড পাওয়ার ট্রান্সফরমার
নিচে দেখতে পাচ্ছি টরোয়ডাল/টরোয়েড ট্রান্সফরমার এর ভেতরের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ-

টরোয়েড/টরোয়ডাল ট্রান্সফরমার এর ভেতরের বিভিন্ন পার্টস
টরোয়েড/টরোয়ডাল ট্রান্সফরমার এর ভেতরের বিভিন্ন পার্টস

প্রশ্নঃ টরোয়েড ট্রান্সফরমার ব্যবহারের সুবিধা কি কি?

বিশেষ কিছু সুবিধার জন্য টরোয়ডাল ট্রান্সফরমার ব্যবহার করা হয়, যথাঃ
  • একই আকৃতির সাধারন ট্রান্সফরমারের তুলনায় টরোয়েড ট্রান্সফরমার অনেক বেশি আউটপুট পাওয়ার দিতে সক্ষম
  • উপযুক্ত ভাবে নির্মিত টরোয়েড ট্রান্সফরমার এর এফিশিয়েন্সি বেশি হয়ে থাকে।
  • টরোয়েড ট্রান্সফরমার এর ইন্ডাকটেন্স মান বেশি হয় যা ক্ষেত্র বিশেষে সুবিধা জনক।
  • টরোয়েড কোর ট্রান্সফরমার এর ম্যাগনেটিক ফ্লাক্স লিকেজ নাই বললেই হয়।
  • অফ লোড লস অনেক কম।
  • এর দ্বারা উৎপন্ন নয়েজ অনেক কম যা বিশেষ ভাবে সূক্ষ্ণ যন্ত্রপাতির জন্য অতীব জরুরী।
  • ম্যাকানিক্যাল হাম বা নয়েজ ও অনেক কম। যা সাধারন EI কোর ট্রান্সফরমার এ অনেক বিরক্তির কারণ।
  • এর গোলাকার আকৃতির জন্য একে সহজে যে কোন কিছুর সাথে সংযুক্ত করা যায়।
  • একই ক্ষমতার সাধারণ ট্রান্সফরমার এর তুলনায় এর আয়তন প্রায় অর্ধেক হতে পারে।
এত সুবিধা থাকা সত্বেও টরোয়েড কোর ট্রান্সফরমার প্যাঁচানো ও এর নির্মান শৈলী জটিল হবার কারনে সাধারণ ব্যবহারের জন্য আমাদের দেশে তেমন জনপ্রিয় হয়নি।

Comments

Popular posts from this blog

How to Chose Suitable Size of Electric Cable & Circuit Breaker

Double Battery Inverter or UPS Connection

Single Phase Distribution Board Wiring Diagram