মোটর, জেনারেটর এবং মেশিন Part-1
সূচনাঃ
কেমন আছেন সবাই? আশা করি ভাল। আবার দেখা হয়ে গেল আপনাদের সাথে। এবার আসলাম একটু ভিন্ন স্বাদ এর কিছু নিয়ে। বাস্তব জীবনে আমরা “মেশিন” কথাটি অনেকাংশে ব্যবহার করি ঠিকই কিন্তু সবাই জানি না আসলে এই মেশিন শব্দটির সঠিক বৈজ্ঞানিক অর্থ কি। তাছাড়া জেনারেটর বা মোটর
নিয়ে আমরা দিনের অনেকাংশ সময় কাটিয়ে দেই, যা কিনা প্রকৃতপক্ষে মেশিন।
কিন্তু জানা নেই কিভাবে এগুলো কাজ করে। এর পিছনে এমন কি আছে যার ফলে
কারেন্ট চলে গেলে আমরা ঘরেই কারেন্ট তৈরি করে আবার আগের মত সব কিছু চালাতে
পারছি। এই যান্ত্রিক শক্তি ব্যবহার করে মাটির অভ্যন্তর থেকে মুহূর্তের
মধ্যে পানি তুলতে পারছি। কিন্তু একবারও কি নিজেকে প্রশ্ন করেছেন এদের
কার্যপ্রণালী সম্পর্কে? আজকে ইলেকট্রিক্যাল শর্ট নোট এর মাধ্যমে জেনে নেই এসমস্ত টুকিটাকি বিষয়গুলো। সেই সাথে ডিসি জেনারেটরের আভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অংশ ও এর গঠন প্রণালি সম্পর্কে জানবো।
পরিচ্ছেদসমূহ [দেখুন]
মেশিন বা যন্ত্র কি?
মেশিন বা যন্ত্রের সংজ্ঞা অনেকটা এরকম- “নির্দিষ্ঠ কার্যদ্ধার কল্পে বিভিন্ন যন্ত্রাংশের সমন্বয়ে যে যান্ত্রিক বস্তু তৈরি করাহয় তাকেই মেশিন বা যন্ত্র বলে“।
এই সংজ্ঞা থেকে কিছু জিনিস বুঝতে পারলাম, যেমনঃ একটি মেশিনে কিছু
যন্ত্রাংশ থাকে। এই যন্ত্রপাতি গুলোই মেশিন টিকে চালায় এবং এটি একটি
নির্দিষ্ঠ কাজ করতে সক্ষম। মেশিন যেমন ইলেকট্রিক্যাল হতে পারে তেমনি
মেকানিক্যাল ও হতে পারে। নিচে একটি সরল মেকানিক্যাল মেশিন পুলি ও এর দ্বারা কিভাবে কাজ করা হয় তা দেখানো হলো-
ইলেকট্রিক্যাল মেশিন কি?
সহজ কথায় ইলেকট্রিক্যাল মেশিন হলো
এমন একটি যান্ত্রিক পদ্ধতি যা কিনা ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ারকে মেকানিক্যাল
এনার্জি তে অথবা মেকানিক্যাল পাওয়ার কে ইলেকট্রিক্যাল এনার্জি তে রূপান্তর
করতে পারে। এখন ইলেকট্রিক্যাল মেশিন নিয়ে আরেকটু পরিষ্কার হওয়ার জন্য আমরা
জেনারেটর নিয়ে আলোচনায় এগিয়ে যাই-
জেনারেটর কি?
জেনারেটর ও মোটর দুটি খুবই কমন মেশিন যা
আমরা কমবেশি সবাই চিনি। ধরুন একটি জেনারেটর চালু করলে সেখান থেকে বিদ্যুৎ
উৎপন্ন হচ্ছে, তাহলে এটাকে আমরা বলব জেনারেটর। এখন প্রশ্ন হচ্ছে জেনারেটর
এর অর্থ টা আসলে কি। জেনারেটর একটি ইংরেজি শব্দ। যার অর্থ- কোন কিছু উৎপন্ন করা বা জেনারেট করা। কিন্তু কি উৎপন্ন করা? পাওয়ার/শক্তি উৎপন্ন করা। অর্থাৎ আমরা যদি কোন জেনারেটর চালুকরি তাহলে সেটি থেকে নির্দিষ্ট পরিমানের ইলেকট্রিক্যাল এনার্জি উৎপন্ন
হবে। তাই যেহেতু এখানে মেকানিক্যাল পাওয়ারকে ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ারে
রূপান্তর করা হচ্ছে সেহেতু এটিকে আমরা জেনারেটর বলছি। এবং উপরোক্ত
সংজ্ঞানুযায়ী এটি একটি মেশিন ও বটে।
মোটর কি?
আচ্ছা এবার আসি মোটর
এর কথায়। আমরা আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে মোটরের সাথে সবাই কম বেশি পরিচিত।
প্রতিদিন আমরা এই মোটর আমরা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে থাকি। যেমন সকালের
পানি তোলা থেকে শুরু করে আরও অনেক কাজ আছে যা মোটর দ্বারা করা হয়ে থাকে।
তাহলে আমাদের মনে এই প্রশ্ন জাগতেই পারে যে এই মোটর কিভাবে কাজ করছে। খুব
সহজ ব্যাপার এটি। যেকোন মোটর চালাতে নির্দিষ্ট পরিমানের বিদ্যুৎ শিক্তি
প্রবাহিত করতে হয়। আর এই বিদ্যুৎ প্রবাহকেই কাজে লাগিয়ে মোটর দ্বারা আমরা
বিভিন্ন কাজ করে থাকে। অর্থাৎ সহজ কথায়- যার মধ্যে ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার ইনপুটে দিলে মেক্যানিকাল পাওয়ার কে আউটপুটে পাওয়া যায় সেটিই মোটর। এটি ঠিক জেনারেটর এর উলটো।
তাড়িত চুম্বক কি?
এখন পরবর্তী ধাপে যাওয়ার আগে আমরা আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জেনে নিই। প্রথমেই আসি, তাড়িতচৌম্বক এর কথায়। তড়িত চুম্বক আসলে কি? এবং, তাড়িত চুম্বক ই বা কি জিনিস? কোন একটি
লোহার দন্ডের চারপাশে যদি কিছু পরিমান তার পেঁচিয়ে সলিনয়েড কয়েল তৈরি
করে তার মধ্যে দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহ করা হয় তাহলে ওই দন্ডের চার পাশে এক
ধরনের চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি হয় যাকে তড়িত চুম্বকীয় বল (Electro Magnetic Force) বলে। আবার যদি তারের মধ্যে দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া হয় তা আবার পুণরায় আগের মত লোহার খন্ডে পরিণত হয়। এই তড়িত চুম্বকীয় বল দ্বারা আবিষ্ঠ চুম্বক কে বলে তাড়িত চুম্বক। এবং এই তড়িচ্চুম্বকীয় বল এর ফলে ঐ দন্ডের চারপাশে যে ক্ষেত্র তৈরি হয় তাকে বলা হয় চৌম্বকক্ষেত্র।
ইন্ডাকশন কি?
এবার আসি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে। তা হল ইন্ডাকশন (Induction)।
ইন্ডাকশন শব্দটি এসেছে ইন্ডিউস থেকে। যার অর্থ কোন কিছু জমা হওয়া। তাহলে
এখানে কি জমা হওয়ার কথা বলা হচ্ছে? এক কথায় এখানে জমা হচ্ছে পাওয়ার বা শক্তি। তাহলে এখান থেকে খুব সহজেই বলা যায় যে, “যদি
কোন তাড়িতচৌম্বক ক্ষেত্রের চারপাশে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের মধ্যে একটি
কন্ডাক্টর বা কোন পরিবাহী নাড়াচাড়া/অবস্থার পরিবর্তন করাহয় তাহলে ওই
কন্ডাক্টরের দুই প্রান্তে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে।“ আর একেই বলা হয় তাড়িত চৌম্বকীয় আবেশ বা ইন্ডাকশন। যে বিদ্যুৎ আউটপুটে পাওয়া যায় তাকে বলা হয় “ইন্ডিউসড কারেন্ট”।
এখানে বিজ্ঞানী ফ্যারাডের সূত্র যা বলেঃএকটি তারের কয়েল যদি চৌম্বকক্ষেত্রের মধ্যে কোন অবস্থানের পরিবর্তন আনে তাহলে সেখানে ইলেক্ট্রমোটিভ ফোর্স তৈরি হবে যদি কন্ডাক্টর সার্কিট টি পরিপূর্ণ থাকে।
একটি ডিসি জেনারেটরের গঠন প্রনালীঃ
একটি ডিসি জেনারেটরে নিম্নোক্ত অংশগুলো দ্বারা নির্মিত হয়-ইয়োকঃ
মেশিনের
বাইরের আবরনী কেই ইয়োক বলা হয়। ছোট জেনারেটর এর ক্ষেত্রে এই ইয়োকে কাস্ট
আয়রণ ব্যবহার করা হয়।আর বড় জেনারেটর এ স্টিল ব্যবহৃত হয়।
স্ট্যাটর ম্যাগ্নেট/ফিল্ড ম্যাগ্নেটঃ
এর
মধ্যে ২ টি অংশ থাকে যাদের কে একাধারে পোল শ্যু ও পোল কোর বলা হয়। পোল
শ্যু এর প্রধান কাজ হচ্ছে ম্যাগ্নেটিক ফিল্ড কে তার অভ্যন্তরীন জায়গার
মধ্যে চার পাশে ছড়িয়ে দেওয়া।
ফিল্ড ওয়াইন্ডিং ও পোল কয়েলঃ
এটি তামার তার দ্বারা তৈরি থাকে। প্রতিটি পোলে এটি সুবিন্যস্ত ভাবে সাজানো থাকে।
আর্মেচার কোরঃ
জেনারেটর
এর ভিতরের যে অংশ টুকু ঘুরতে সক্ষম তার সবটুকুকেই আরমেচার কর বলা হয়। এটি
দেখতে অনেকটা সিইলিন্ডারের মত দেখতে যাতে তামার কন্ডাক্টর পেচানো থাকে।
আর্মেচার উইন্ডিংঃ
এটি হল আরমেচার স্লটের বাকি অংশ যেটুকু পেচানো থাকে।
আর্মেচার/আরমেচারঃ
এটি জেনারেটরের মধ্যে একমাত্র ঘুরন্ত অংশ যার সাথে বারে বের হওয়া শ্যাফট লাগানো থাকে।
কমিউটেটর:
এটি দেখতে অনেকটা গোলাকার বিয়ারিং এর মত ,যার মাধ্যমে কারেন্ট এসে এখানে জমা হয় পরবর্তী ধাপে যাওয়ার জন্য।
ব্রাশঃ
এটি জেনারেটরের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। এর কাজ হল উৎপাদিত এসি কারেন্ট কে ডিসি তে রূপান্তর করা। এটি দেখতে অনেকটা চতুষ্কোণাকার আকৃতির। এটি প্রধানত কার্বন/গ্রাফাইট দিয়ে তৈরি করা হয়ে থাকে।
স্লিপ রিংসঃ
এটি কমিউটেটরের সাথে সংযুক্ত থাকে।
ব্রাশ ড্রপঃ
এখানে
সামান্য কিছু পরিমান ভোল্টেজ ড্রপ দেখা যায়। এটি জেনারেটরের অভ্যন্তরীন
রেজিস্ট্যান্স এর জন্য। তবে এটি সাধারনত ১-২ ভোল্টের বেশি হয় না।
জেনারেটরের
মধ্যে কয়েল গুল বিভিন্ন ভাবে সাজানো থাকে। কতগুলো থাকে একক ভাবে পেচানো বা
সিঙ্গেল টার্ন, আবার কতগুলো মাল্টি টার্ন, যেখানে একসাথে অনেকগুলো কয়েল
পেচানো থাকে।
নোটঃ এখানে উল্লেখ্য যে জেনারেটরের ডিজাইন ভেদে বিভিন্ন অংশের নাম ভিন্নভিন্ন হতে পারে। এবং কিছু অতিরিক্ত অংশ ও যুক্ত থাকতে পারে।
Comments
Post a Comment
Thanks for comment